“দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় আমার উপর যাকাত ও কোরবানি ফরয হয়ে যায়” সফলতার গল্পঃ আবদুল্লাহ জায়েদ
প্রকাশঃ ১১:২৬ মিঃ, এপ্রিল ২০, ২০১৮
লাইফের প্রথম আয়টা ছিল ক্লাস সেভেনে পড়ার সময়। শুরুটা খুব ছোটভাবেই হয়েছিল। প্রথম আয়টা ছিল ১৮০০ টাকা গুগল এ্যাডসেন্স থেকে। প্রথম আয়ের পর টুকিটাকি কাজ করতে থাকি। যখন আমি নবম শ্রেণীতে পড়ি তখন বড় ধরনের আয় হয়। সেই অক্টোবর মাসে ২২০০০ টাকা আয় করি। এভাবে কাজ করতে করতে ভাল একটা সেভিংস হয় এবং দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় আমার উপর যাকাত ও কোরবানি ফরয হয়ে যায়। কাজ করতে করতে টিম তৈরি করি এবং কলেজে পড়ার জন্য ঢাকায় চলে আসি। নটরডেম কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ার সময় এক রুমের একটা অফিস দিয়ে যাত্রা শুরু করি।
“Blaze Tech” বাংলাদেশের আইটি জগতে এখন এক জনপ্রিয় নাম এবং বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নকৃত রাজধানীর কাওরান বাজারস্থ জনতা টাওয়ার সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে তরুণ স্ট্যার্ট-আপ হিসেবে কাজ করছেন আবদুল্লাহ জায়েদ । Blaze Tech এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও আবদুল্লাহ জায়েদ তরুণদের জন্য এখন এক অনুকরণীয় নাম। সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া একটা ছেলে/মেয়ের হাতে ইন্টারনেট মানে যখন অভিবাবকদের ভয়ার্ত চেহারা সেখানে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া আবদুল্লাহ জায়েদ ইন্টারনেট এর পজেটিভ ব্যবহার করে তরুণদের জন্যে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আজকের বাংলাদেশে সত্যিই এমন অসামান্য সফলতার গল্প সম্ভব কারণ বর্তমান সরকার বাড়িয়ে দিয়েছে সহযোগীতার অবারিত হাত। এরকম জায়েদদের গল্প আমাদের শুধু গর্বিতই করেনা সাহস ও শক্তি দেয় সুন্দর আগামির। প্রযুক্তি বাংলা টিম ও আবদুল্লাহ জায়েদ এর সাথে গত সন্ধ্যায় জমে উঠেছিল প্রানবন্ত এক আড্ডা । প্রযুক্তি বাংলার পাঠকদের জন্য সেই সফলতার গল্প তুলে ধরছে প্রযুক্তি বাংলার বিশেষ প্রতিনিধি তারেক হাবিব।
প্রযুক্তি বাংলাঃশুভ সন্ধ্যা। কেমন আছেন? আপনার অফিসটা বেশ চমৎকার করে সাজিয়েছেন।
আবদুল্লাহ জায়েদঃ শুভ সন্ধ্যা। আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি। ধন্যবাদ আমাদের অফিস ডেকোরেশন এর প্রশংসা করার জন্য।
প্রযুক্তি বাংলাঃ খুব কম বয়সী তরুণ স্টার্ট-আপ হিসেবে "ব্লেজ টেক" দিয়ে আপনার আত্নপ্রকাশ । এই সফলতার বাস্তবরুপ ও শুরুটা কখন কিভাবে হয়েছিল?
আবদুল্লাহ জায়েদঃ লাইফের প্রথম আয়টা ছিল ক্লাস সেভেনে পড়ার সময়। শুরুটা খুব ছোটভাবেই হয়েছিল। প্রথম আয়টা ছিল ১৮০০ টাকা গুগল এ্যাডসেন্স থেকে। প্রথম আয়ের পর টুকিটাকি কাজ করতে থাকি। যখন আমি নবম শ্রেণীতে পড়ি তখন বড় ধরনের আয় হয়। সেই অক্টোবর মাসে ২২০০০ টাকা আয় করি। এভাবে কাজ করতে করতে ভাল একটা সেভিংস হয় এবং দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় আমার উপর যাকাত ও কোরবানি ফরয হয়ে যায়। কাজ করতে করতে টিম তৈরি করি এবং কলেজে পড়ার জন্য ঢাকায় চলে আসি। নটরডেম কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ার সময় এক রুমের একটা অফিস দিয়ে যাত্রা শুরু করি।
প্রযুক্তি বাংলাঃ তথ্য-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে কম বয়সী উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানোর সময় কি ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছিলেন, এবং সেগুলো কিভাবে পেরিয়ে এতদূর আসলেন, এক্ষেত্রে কাকে বেশি পাশে পেয়েছেন?
আবদুল্লাহ জায়েদঃ আমার প্রথম নিয়োগের প্রয়োজন হয়েছে যখন আমি দশম শ্রেণীতে পড়ি, কিন্তু সমস্যা হলো এত কম বয়সী ছেলের জন্য কাজ করবে কে! বস হিসেবে এটা খুবই কঠিন কাজ ছিল। তখন আমি অনলাইনে ফ্রিল্যান্সারদের মাধ্যমে কাজ করিয়ে নিতাম। কারণ অনলাইনে তো আর বয়স জানার উপায় নেই। প্রথম দিকের কাজগুলো অনলাইনে বেশি করে নেওয়া হত। যখন আমাদের টিমের দক্ষতা অনেক বেশি হতে থাকলো তখন আমরা একটা অফিস নিলাম যেখানে কাজ করতে আরও দুই জন সহযোগী পরে পাঁচজন তারপর নতুন অফিস সেখানে আরও দক্ষ কর্মী তারপরে আমাদের আজকের "ব্লেজ টেক"। যেখানে বর্তমানে কাজ করছে লোকালি ২০ জন এবং বিদেশি ১৫ জন যা অনেক বড় একটি টিম আমার জন্য।
প্রযুক্তি বাংলাঃ বাংলাদেশের আইসিটি খাতকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে আপনার প্রতিষ্ঠান কি কাজ করছে? প্রযুক্তি বাংলার পাঠক ও তরুণরা সেসব কর্ম পরিকল্পনার কথা জেনে নিশ্চয়ই উপকৃত হবেন ও উদ্বুদ্ধ হবে।
আবদুল্লাহ জায়েদঃ "ব্লেজ টেক" মূলত ই-কমার্স সল্যুশনস এবং ডিজিটাল মার্কেটিং সল্যুশনস প্রদান করছে। আমাদের নিজেদেরই রয়েছে ১৫ টির বেশী ই-কমার্স ব্র্যান্ডস। বেসিক থেকে শুরু করে ডিফিকাল্ট লেভেলে কাজ গুলো আমরা নিজেদের অফিসে করছি। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বিদেশী কোম্পানিগুলো আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে কাজ করছে কিন্তু আমরা যা করছি তা হলো বাইরে আউটসোর্সিং না করে আমাদের লোকাল রিসোর্স মানে বাংলাদেশের যুবসমাজ বাংলাদেশি ম্যানপাওয়ার কাজে লাগিয়ে আমরা এগুলোর উন্নতি করছি। এখানে "ব্লেজ টেক" কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছে বাংলাদেশের মেধাবী মানুষদের এবং দেশি রিসোর্স কাজে লাগিয়ে বিদেশি মুদ্রা আয় করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে।
প্রযুক্তি বাংলাঃ দেশরত্ন শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার আপনারাও এখন অংশীদার সেজন্য সরকারের যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। তরুণ আইসিটি স্ট্যার্ট-আপ হিসেবে এক্ষেত্রে আপনার কি মনে হয় ভবিষ্যতে আইসিটি শিল্পকে এগিয়া নেয়ার লক্ষ্যে এর সাথে আরও কেমন ধরনের সুবিধা যোগ করলে উদ্যোক্তারা উপকৃত হবে বলে আপনি মনে করেন?
আবদুল্লাহ জায়েদঃ ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিশনের জন্য আমরা আইসিটি ইন্ডাস্ট্রিতে আমাদের মতো উদ্যোক্তাদের আগের থেকে অনেক বেশী সুবিধা পাচ্ছি। তারপর ও উন্নত বিশ্বের সাথে যদি প্রতিযোগিতা করতে চাই তাহলে আমাদের আরো বেশ কিছু জিনিস গুছিয়ে নিতে পারলে ভালো হতো তবেই আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জন করতে পারব। আমি মনে করি আইটি ব্যবসার বিভিন্ন ধরনের পেমেন্টের প্রয়োজন পড়ে, আমরা শুধু পেমেন্ট রিসিভ করি না, আমরা পেমেন্ট দিয়েও থাকি। অনলাইন পেমেন্ট করার জন্য আমাদের যদি ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্ট চ্যানেল থাকে আমাদের ব্যবসার জন্য যদি ডেডিকেটেড মাস্টার কার্ড কিংবা ভিসা কার্ড থাকে যেখানে আমরা লিমিট বেশি পাব। যদিও কিছু কিছু সার্ভিস রয়েছে কিন্তু তারপরও ডেডিকেটেড কিছু থাকলে খুব ভালো হয় আমাদের জন্য।
প্রযুক্তি বাংলাঃ এবার আমি একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন আসি, যে বয়সে ক্যাম্পাসে বন্ধুবান্ধব নিয়ে আড্ডা ও হই-হুল্লোড় করে বেড়ানোর কথা সে বয়সে একটি আইটি প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পড়াশোনা এবং ব্যবসা দুটোর মধ্যে সমন্বয় করতে গিয়ে ঠিক কতোখানি হিমশিম খেতে হয়?
আবদুল্লাহ জায়েদঃ সত্যি বলতে সমস্যা হয়। তবে বেশি না, যেহেতু ব্যবসা নিয়ে খুব ভালবাসা আছে তাই চেষ্টা করি পড়াশোনা ঠিক রেখে ব্যবসাটা করতে পারি। আর আমার বিশ্ববিদ্যালয় ওপেন ক্রেডিট হওয়ায় আমার সপ্তাহে দুই দিন ক্লাস করতে হচ্ছে। তাই বাকী পাঁচদিন আমি ব্যবসায় মনোযোগ দিতে পারছি। একটু পরিশ্রম বেশি হয়, যেহেতু আমি ব্যবসা ভালোবাসি তাই পরিশ্রম বেশি হলেও আমি মানিয়ে নিতে পারছি।
প্রযুক্তি বাংলাঃ আপনি অনেক তরুণের জন্য অনুপ্রেরণা এ ক্ষেত্রে সফলতার পেছনে আপনার পরিবার সহযোগিতা কতটুকু ছিল?
আবদুল্লাহ জায়েদঃ ইংরেজিতে একটা কথা আছে "family is the first school" আমি এটা বিশ্বাস করি কারন আমার সফলতার পেছনে আমার পরিবারের অবদান অনেক বেশি। এটা বাচ্ছাকে বেড়ে তোলার পেছনে বাবা মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি, বিশেষ করে কিশোর বয়সে। আমার বাবা-মা আমাকে যথেষ্ট পরিমাণ সাপোর্ট দিয়েছে যখন আমার হাতে ইন্টারনেট চলে আসে তখন সবার এখনকার মতো ওপেন ছিলনা। ইন্টারনেটকে তখন সবাই এভাবে স্বাগত জানাতো না। তখন সবাই মনে করত ইন্টারনেটে ভাল জিনিসের থেকে খারাপ জিনিসই বেশি হয়। আমার বাবা মাকে আমি ধন্যবাদ দিব কারন তারা আমার উপর বিশ্বাস রেখেছে এবং আমিও তাদের বিশ্বাসটা রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।
প্রযুক্তি বাংলাঃ আইসিটি এর ক্ষেত্রে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জগুলো কি? তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রতি আপনার বক্তব্য কী?
আবদুল্লাহ জায়েদঃ আইসিটি অনেক ফ্রার্স্ট ফেসিং ইন্ডাস্ট্রি। প্রত্যেক মাসে, প্রত্যেক দিনে নতুন নতুন টেকনোলজি আসছে। নতুন নতুন আইটি ব্যবসা মডেল আসছে। আমার মতে নতুন উদ্যোক্তারা যখন বা কোন স্টার্টআপ চিন্তা করবে তখন লোকাল সিচুয়েশন এর পাশাপাশি আমরা আন্তর্জাতিক মার্কেটটাও দেখব কারণ আন্তর্জাতিক মার্কেট আমাদের লোকাল মার্কেট থেকে অনেক ফ্রার্স্ট ফেসিং।সব সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন আন্তর্জাতিক মার্কেট থেকে যেন পিছিয়ে না পড়ি আমরা।
প্রযুক্তি বাংলাঃ ভবিষ্যতে নিজেকে ঠিক কোন জায়গায় এবং কিভাবে দেখতে চান? বর্তমানে আপনার দৃষ্টিতে আপনি কতটুকু সফল বলে মনে করেন?
আবদুল্লাহ জায়েদঃ "ব্লেজ টেক" আলহামদুলিল্লাহ বাংলাদেশে বেশ ভাল করছে এবং এটি একটি জনপ্রিয় নাম হয়ে উঠছে। আমার ইচ্ছা "ব্লেজ টেক"কে আমরা গ্লোবালি নিয়ে যাবো। গ্লোবালি কোম্পানিটিকে পরিচয় করিয়ে দিব। একটি গ্লোবাল ব্র্যান্ড হিসেবে আমরা বাংলাদেশকে উপস্থাপন করতে চাই। "ব্লেজ টেক" এর সফলতা নিয়ে আমি বলব যে, আমাদের পথ চলা কেবলমাত্র শুরু। আমাদের কোম্পানীর বয়স হয়েছে মাত্র তিন বছর এবং আমার ক্যারিয়ারের হয়েছে সাত বছর। আমাদের এখনো অনেক পথ পাড়ি দেওয়া বাকি রয়েছে।
প্রযুক্তি বাংলাঃ আপনার কাছে সর্বশেষ প্রশ্ন, বর্তমান সরকার তথা আইসিটি ডিভিশন অথবা বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক যদি স্টার্টআপদের জন্য এই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে না দিতো তাহলে এই পর্যায়ে আসতে আপনাকে কতখানি বেগ পেতে হত বলে আপনি মনে করেন? কিংবা আজকের সফল জায়েদ কি আমরা দেখতে পেতাম?
আবদুল্লাহ জায়েদঃ একটা ইন্ডাস্ট্রির ইকো-সিস্টেম যখন বন্ধু সুলভ হয় তখন যেকোন কোম্পানির জন্য ঐ ইন্ডাস্ট্রিতে সফলতা অর্জন করা তুলনামূলক সহজ হয়ে যায়। বাংলাদেশে যদি আমরা লক্ষ করি, আইসিটি ইকো-সিস্টেম অনেক বেশি উন্নত। এজন্য আমি এবং আমার মতো তরুণ উদ্যোক্তা আগের থেকে অনেক বেশী সুবিধা পাচ্ছে কারন তারা একটি ইকোসিস্টেমের অংশ হয়ে গেছে। বাংলাদেশ হাইটেক পার্কের কথা যদি বলি আমি, এই অফিসে (জনতা টাওয়ার সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক) আছি, আমার মত ১৬টি কোম্পানি এখানে। আগে কখনো এতগুলো আইটি কোম্পানি একসাথে পাওয়া যেত নাহ। যেহেতু আমি একইসাথে বিভিন্ন আইটি উদ্যোক্তাদের সাথে আইডিয়া শেয়ার করতে পারছি এতে একটা ইকো-সিস্টেম তৈরি হয়েছে যা আমার মতো বাকি উদ্যোক্তাদেরও খুব বেশি সহযোগিতা করছে।
ধন্যবাদ প্রযুক্তি বাংলা.নেট কে আমাদের সাথে থাকার জন্য এবং নতুন দিনের জন্য শুভকামনা রইল।
Views : 3783
ব্লগ

একাকীত্বে আমি সৃষ্টিকর্তার ছায়া দেখি — নাসরিন হামিদ
একাকীত্বে আমি সৃষ্টিকর্তার ছায়া দেখি
— নাসরিন হামিদ
২১/০৫/২৫
মানুষ একাকী হলে, সে কাঁদে না— সে জেগে ওঠে।
যখন চারপাশে কেউ থাকে না,
তখনই সে দেখতে পায়—
অদৃশ্য এক আলো,
যা শুধু সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে আসে।
আমি একা যখন, আমি সবচেয়ে শক্তিশালী।
কারণ তখনই আমি শুনতে পাই তাঁর ডাক,
যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন ভাঙার জন্য নয়,
জেগে ওঠার জন্য।
মানুষ ভীড়ের মধ্যে নয়,
নির্জনতায় তার সবচেয়ে পবিত্র রূপে পৌঁছে যায়।
কা