বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ হল সফলভাবে

প্রকাশঃ ০৮:১৫ মিঃ, মে ১২, ২০১৮ Card image cap

বিটিআরসি ২০১৫ সালের নভেম্বরে দেশের প্রথম এ স্যাটেলাইট নির্মাণের জন্য ফ্রান্সের থালেস এলিনিয়া স্পেস ফ্যাসিলিটিস কোম্পানির সঙ্গে ২৪৮ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে। কোম্পানিটি কয়েক মাস আগে স্যাটেলাইটটির তৈরির কাজ সম্পন্নের পর এটি ফ্রান্সের ক্যানেস ওয়্যারহাউজে রাখা হয়। পরে ২৯ মার্চ এ স্যাটেলাইট ফ্লোরিডায় স্থানান্তর করা হয়।

বিশেষ প্রতিনিধি:

নির্ধারিত সময়ে তা পৌঁছে গেছে নিজ কক্ষপথে। সারা দেশের মানুষকে আনন্দে ভাসিয়ে শুক্রবার মধ্যরাতে শুরু হয় লাল সবুজের মহাকাশ অভিযান। সেখান থেকে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সিগন্যালও পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা্ থেকে স্যাটেলাইটের আকাশ পানে উড়ে যাওয়ার এ মাহেন্দ্র

ক্ষণ প্রত্যক্ষ করেন পলকসহ প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল।

পলক বিবিসি বাংলাকে বলেন, “স্যাটেলাইটটি সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে এবং গ্রাউন্ডে সিগন্যালও পাঠিয়েছে।”

ফ্লোরিডার স্বচ্ছ আকাশে প্রায় সাত মিনিট স্যাটেলাইটটি দেখা যায়।

ফ্লোরিডা থেকে উৎক্ষেপণ প্রত্যক্ষকারী আইসিটি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু-১ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি সময়োপযোগী উদ্যোগও যার ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ভিশন রয়েছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বহু বাংলাদেশীও এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সরাসরি সম্প্রচার ও ওয়েবকাস্ট প্রত্যক্ষ করেন।

পৃথিবী হতে যাত্রা শুরুর পর ৩৬ হাজার কিলোমিটার ওপরে গিয়ে অবস্থান নেয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট।

ফাইনাল অরবিটে মানে ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে স্যাটেলাইটটির যখন ইন-অরবিট টেস্ট বা আইওটি হয়ে যাবে, তখন স্যাটেলাইট একেবারে চূড়ান্তভাবে স্থাপিত হবে। ওই সময়ে স্যাটেলাইট একটি স্থির অবস্থায় চলে আসবে।

১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে স্থির হওয়া পর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১০৪ ডিগ্রি নর্থ ইস্ট দিয়ে পৃথিবীর চারপাশে ঘুরতে শুরু করবে। পৃথিবী হতে ৩৬ হাজার কিলোমিটার ওপর দিয়ে চলবে এই স্যাটেলাইট।

৩৬ হাজার কিলোমিটার উচ্চতায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট পৃথিবীর সমান গতিতেই ঘুরবে। মানে পৃথিবীর মতোই ২৪ ঘন্টায় একবার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করবে। ফলে পৃথিবী হতে স্যাটেলাইটটিকে স্থির মনে হবে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট হচ্ছে জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট। স্যাটেলাইটটির প্রধান অংশের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টেটা সিস্টেমস, ট্রান্সমিটার, পাওয়ার সাপ্লাই ও রিসিভার।

এখন স্যাটেলাইটটি কক্ষপথে চূড়ান্তভাবে স্থাপিত হয়ে গেলে গাজীপুরের অবস্থিত গ্রাউন্ড স্টেশনের ট্রান্সমিটার হতে মডুলেটেড সিগন্যাল বা মিশ্র সিগন্যালকে উচ্চ কম্পাঙ্কের সিগনাল বা বাহক সিগনালের সঙ্গে স্যাটেলাইটে পাঠানো হবে। স্যাটেলাইট সেই তরঙ্গ করে বিবর্ধিত বা অ্যাম্পলিফাইড করে গ্রাহকের কাছে পাঠাবে।

সহজ কথায় নিজের ট্রান্সপন্ডারগুলোর মাধ্যমে রেডিও টেলিকমিউনিকেশন সিগন্যাল বিবর্ধিত বা অ্যাম্পলিফাইড করে ব্রডকাস্ট করবে। পৃথিবীর বিভিন্ন আলাদা আলাদা স্থান হতে তথ্য পাঠানো যন্ত্র বা সোর্স ট্রান্সমিটার এবং তথ্য গ্রহণকারী যন্ত্র বা রিসিভারের মধ্যে সংযোগ ঘটিয়ে দেবে।

কক্ষপথে স্যাটেলাইটটির ফুয়েল লাইফ ১৫ দশমিক ৬ বছর। আর ডিজাইন লাইফ ১৮ বছরের মতো। এই সময়ের পর স্যাটেলাইটটি আর ব্যবহারযোগ্য থাকবে না।

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট: বাণিজ্যিকভাবে কতটা সফল হবে?

বিটিআরসি ২০১৫ সালের নভেম্বরে দেশের প্রথম এ স্যাটেলাইট নির্মাণের জন্য ফ্রান্সের থালেস এলিনিয়া স্পেস ফ্যাসিলিটিস কোম্পানির সঙ্গে ২৪৮ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে। কোম্পানিটি কয়েক মাস আগে স্যাটেলাইটটির তৈরির কাজ সম্পন্নের পর এটি ফ্রান্সের ক্যানেস ওয়্যারহাউজে রাখা হয়। পরে ২৯ মার্চ এ স্যাটেলাইট ফ্লোরিডায় স্থানান্তর করা হয়।

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য বাংলাদেশ ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে রাশিয়ার স্যাটেলাইট প্রতিষ্ঠান 'ইন্টারস্পুটনিক' এর কাছ থেকে ২ কোটি ৮০ লাখ ডলারে ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমায় (স্লট) কক্ষপথ স্লট ক্রয় করে।


Views : 1601

সম্পর্কিত পোস্ট